৩২ বছর পর রেয়াত সুবিধা বাতিল, আজ থেকে বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে রেলে

Passenger Voice    |    ১১:১২ এএম, ২০২৪-০৫-০৪


৩২ বছর পর রেয়াত সুবিধা বাতিল, আজ থেকে বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে রেলে

রেলের ভাড়া বাড়ছে আজ থেকে। রুট ভেদে ৭ থেকে ৯ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে। বাড়ছে কন্টেনার পরিবহন ভাড়াও। বর্ধিত ভাড়ার টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে প্রতিটি স্টেশনে। ফলে আজ থেকে রেলের প্রতিটি রুটের যাত্রীদের ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ট্রেনে ভ্রমণের জন্য গুণতে হবে বাড়তি ভাড়া।

নতুন ভাড়ার ব্যাপারে চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ৪ মে থেকে নতুন ভাড়া অনুযায়ী ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭৭ টাকা। এসি কেবিনের ভাড়া ১২২৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৪৮ টাকা।চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণির ভাড়া ৪০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা এবং এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া হয়েছে ৮০৫ টাকা থেকে ৮৫৫ টাকা। সোনার বাংলা ট্রেনের শোভন শ্রেণির ভাড়া ৪০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা এবং এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া হয়েছে ৮০৫ টাকা থেকে ৮৫৫ টাকা।চট্টগ্রাম–সিলেট রুটের পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণির ভাড়া ৩৭৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৪৫০ টাকা, এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৭১৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫৭ টাকা। পাহাড়িকার এসি কেবিনের ভাড়া দিনে ৮৫৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৩০ টাকা। রাতে ১০৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫৪১ টাকা। উদয়নের এসি কেবিনের ভাড়া ১৩৩৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫৯১ টাকা। ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হবে ৭৭৭ টাকা। এছাড়া শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার বাদে সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে এসি সিট ও বার্থ এবং প্রথম শ্রেণির সিট ও বার্থ আসনের ভাড়াও আনুপাতিক হারে বেড়েছে।

এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘রেলের লোকসান কমাতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যথায় রেলে সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। এই সুবিধা প্রত্যাহারের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে।রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দূরত্বভিত্তিক রেয়াতি সুবিধায় ৩২ বছর ধরে মূল ভাড়ায় ১০১–২৫০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২০ শতাংশ, ২৫১–৪০০ কিলোমিটারে ২৫ শতাংশ ও ৪০১ কিলোমিটার বা এর বেশি দূরত্বের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর্থিক চাপ ও লোকসান কমাতে এখন এ সুবিধা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে সরকারের যাত্রীসেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি। এর পাশাপাশি ট্রেনে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভ করা আসনের ভাড়াও বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে রিজারভেশন চার্জের ভিত্তিতে অতিরিক্ত সংযোজিত কোচ ও আবেদনের মাধ্যমে রিজার্ভ করা নন–এসি কোচের আসনে ব্যয় বাড়ছে মূল ভাড়ার ২০ শতাংশ এবং এসি কোচের আসনের বাড়ছে ৩০ শতাংশ।

আজ ৪ মে শনিবার থেকে রেলযাত্রায় এই রেয়াতি সুবিধা উঠে যাওয়ার ফলে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ট্রেনে ভ্রমণের জন্য গুণতে হবে বাড়তি ভাড়া।

৩২ বছরের রেয়াতি সুবিধা উঠে যাওয়ায় বর্তমানে গন্তব্যভেদে ২০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের টিকিটের দাম বেড়েছে। এসি চেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৩শ’ এবং কেবিনের ভাড়া বেড়েছে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সহজ–সিনেসিস–ভিনসেন জেভি এরই মধ্যে সারা দেশে স্টেশন–টু–স্টেশন রেয়াত সুবিধা বাদ দিয়ে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবের ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৪টি স্টেশন–টু–স্টেশনে নির্ধারিত নতুন ভাড়ায় এরই মধ্যে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের মাধ্যমে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।

২০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবরে রেলের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) শর্ত অনুযায়ী এখন থেকে প্রতি বছর রেলের ভাড়া বাড়বে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন ভাড়ার হার অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। আর ৭ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে আদেশ জারি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। যা আজ ৪ মে থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে।

গত ২২ এপ্রিল যাত্রী পরিবহনে প্রদত্ত রেয়াত প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে বলা হয়, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। সমপ্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আজ ৪ মে থেকে কার্যকর করা হচ্ছে।

 

 

প্যা/ভ/ম